সংবাদ টাইমস ডেস্ক॥যশোরে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে থেকে প্রায় ৫০০ মোবাইল ফোন ও স্বর্ণলংকার খোয়া গেছে। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) রাতে শহরতলী পুলেটহাটের আদ-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশের এলাকায় এই ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে যশোর কোতয়ালী মডেল থানায় ভুক্তভোগীরা জিডি করতে রীতিমতো লাইন ধরেছেন। এদিকে মাহফিলে প্রচণ্ড ভিড়ে পদদলিত হয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ২১ জন ভর্তি হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
থানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শনিবার বেলা ৫টা পর্যন্ত মাহফিলে মোবাইল ও স্বর্ণলংকার খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ৪০০’র বেশি জিডি হয়েছে। প্রতিনিয়ত যেভাবে জিডি করতে ভুক্তভোগীরা থানায় আসছেন যাতে এই সংখ্যা আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
যশোর শহরতলী পুলেরহাটস্থ আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিন দিনব্যাপি তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিন ছিল শুক্রবার। এদিন রাতে বক্তব্য রাখেন জনপ্রিয় বক্তা মিজানুর রহমান আজাহারী। তার আসার খবরে মুসল্লিদের ঢল নামে মাহফিল এলাকায়। শুক্রবার সকালে থেকেই শীত উপেক্ষা করে মানুষ জমায়েত হয়। বিকেল থেকে মাহফিল স্থান ছাপিয়ে সড়ক, মহাসড়কেও শিশু, নারী, পুরুষের ঢল নামে। দুপুরের পর সড়কে যানজট দেখা দেয়। এজন্য অনেকেই পায়ে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছায়। সব সড়কের ঢেউ গিয়ে মিশে পুলেরহাটে। মাহফিল প্রাঙ্গনে পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এদিন সন্ধ্যায় আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহও বক্তব্য রাখেন।
এদিকে রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে পদদলিত হয়ে একাধিক ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবর। আহতের সংখ্যাও অর্ধশতাধিক।
এছাড়া মোবাইল, স্বর্ণলংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার খবর। তবে হাসপাতাল ও থানা সূত্রে জানা গেছে, মাহফিলে পদদলিত হয়ে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ২১ জন ভর্তি হন। এর মধ্যে রাতেই ১০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর ১১ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়াতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
শুক্রবার গভীর রাত থেকে শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত স্বর্ণলংকার ও মোবাইল খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ৪০০শ’র বেশি জিডি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর কোতয়ালি মডেল থানার ডিউটি অফিসার শারমিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে অসংখ্যা মানুষ মোবাইল হারিয়ে যাওয়া বা চুরির ঘটনায় জিডি করতে আসে। তাৎক্ষণিক যারা মোবাইলের ডকুমেন্ট দেখাতে পেরেছে তারা জিডি করতে পেরেছে। আর শনিবার সকাল থেকে রীতিমতো ভিড় লেগেছে।
দেড় ভরি ওজনের একটি গলার হার খোয়া যাওয়ার পর শনিবার দুপুরে জিডি করতে আসেন সদরের রুপদিয়া থেকে ইব্রাহিম হোসেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা মা মহিলা প্যান্ডেলে বসে আজহারী হুজুরের ওয়াজ শুনছিলেন। এক পর্যায়ে গলায় হাত দিয়ে দেখেন তার গলায় হার নেই। তাই থানায় জিডি করতে এসেছি। বউয়ের গলার চেইন হারিয়ে যাওয়ার পর থানায় জিডি করতে আসেন শহরতলী নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা হয়রত হোসেন। তার মোবাইল ফোনও হারিয়েছে। তিনি বলেন, ‘এভাবে ওয়াজ মাহফিলে চুরি হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক এবং অপরাধমূলক কাজ। কর্তৃপক্ষের আরও সর্তক ও ব্যবস্থাপনা ভালো করা উচিত ছিলো। আর আমাদেরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল, ব্যাপক জনসমাগম স্থানে দামি জিনিসপত্র পরিধান ও নিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি।
শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ‘ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিলাম ইমান আমল ঠিক করতে। আর চোরেরা তাদের ব্যবসা খুঁজে নিলো। হাজারো মানুষের মোবাইল হারিয়ে যাওয়ার খবর শুনেছি মাহফিলের মাঠেই। অনেকেই দুরদুরান্ত থেকে এসেছে, তাই জিডি করতে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জিডি করতে পারছে না। যারা চুরির মতো এ ধরনের কাজ করছে মাহফিলে, তারা মাহফিলের সৌন্দর্য্য নষ্ট করেছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত।
যশোর কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘তিন দিনব্যাপী বৃহৎ মাহফিল হয়েছে যশোরে। ৫ থেকে ৭ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে। এর ভিতরে অসংখ্যা মানুষের মোবাইল, স্বর্ণলংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। অনেকেই জিডি করছেন। কয়েকটি চুরির অভিযোগও পেয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত পহেলা জানুয়ারি বুধবার থেকে তিন দিনব্যাপী এই মাহফিল শুরু হয়। মাহফিলের প্রথম দিন বুধবার আলোচনা করেন আল্লামা মামুনুল হক ও আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন আলোচনা করেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি আমির হাজমা। শেষ দিন শুক্রবার আলোচনা করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারী।
এসটি/এমএইচ