সোমবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন
Headline
Headline
মাগুরা সদর কৃষি অফিসারের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ শত কোটি টাকার প্রতারনা চক্রের মূলহোতা জোছনা গ্রেপ্তার নড়াইলে বিএনপি মহিলা দলের কর্মী সভা অনুষ্ঠিত নড়াইলে ‘সুস্বাস্থ্যের জন্য ফলিত পুষ্টি’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত নড়াইল-১ আসনে ইসলামী আন্দোলনের শোডাউন: কর্মসংস্থান ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অঙ্গীকার-আব্দুল আজিজ বিএনপি ক্ষমতায় গেলে নারী ক্ষমতায় বৃদ্ধি করা হবে – মনিরুল ইসলাম নড়াইলে নবাগত পুলিশ সুপারের গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে মতবিনিময় সভা সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করলেন ইসলামী আন্দোলন মনোনীত নড়াইল-২ আসনের এমপি পদপ্রার্থী তাজুল ইসলাম কালিয়ায় শিশু সন্তানকে ফেলে রেখে পরকীয়া প্রেমিকের হাত ধরে গৃহবধূ উধাও ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে নড়াইল নবীন বরণ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত
Notice :
Wellcome to our website...

দেড় যুগ ধরে দূর্নীতির আঁকড়া নড়াইল জেলা পরিষদ আট মাসে দূর্নীতি মুক্ত করলেন জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান

Reporter Name / ১১০ Time View
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫, ৯:০৯ অপরাহ্ন

নড়াইল প্রতিনিধিঃ
 
দেড় যুগ ধরে দূর্নীতির আঁকড়ায় বেধে থাকা নড়াইল জেলা পরিষদ এখন দূর্নীতি মুক্ত অফিস হিসাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। নড়াইলের জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহানের কঠোর পদক্ষেপ ও দিক নির্দেশনায় মাত্র আট মাসে দূর্নীতি মুক্ত হয়েছে কার্যালয়টি। বিগত বছরগুলোতে এডিবি, রাজস্বসহ বিভিন্ন বরাদ্দ বছরের পর বছর শতকরা ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ উৎকোচ নিয়ে বরাদ্দ দেওয়ার প্রচলন মাত্র কয়েক মাসেই ভেঙ্গে ফেলেছেন বর্তমান প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান। বর্তমানে উৎকোচ  ছাড়াই বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। শুধু বরাদ্দ দিয়েই বসে নেই জেলা পরিষদের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। প্রকল্পগুলো ঠিকমত বাস্তবায়ন করার জন্য বিভিন্ন  দপ্তরের কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত কমিটি করেছেন। শতভাগ কাজ করা না হলে প্রকল্পগুলোর চুড়ান্ত বিল দেওয়া যাবেনা বলে সাফ  জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। এর ফলে সরকারি অর্থ শতভাগ উন্নয়ন কাজে ব্যবহার হচ্ছে। এতে উপকৃত হচ্ছে কৃষি প্রধান জেলা নড়াইলের মানুষ।
 
জানা গেছে, নড়াইল জেলা পরিষদের বিগত দিনের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা দিনের পর দিন কার্যালয়টিকে একটি দূর্নীতিগ্রস্ত অফিস হিসেবে পরিচিত করেছিল। ঐ সময় কর্মকর্তাদের ছত্রছায়ায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় অর্ধশতাধিক দালাল এবং অফিসের দু’জন কর্মচারীর মাধ্যমে উন্নয়ন প্রকল্পের ত্রিশ থেকে চল্লিশ শতাংশ অর্থ ঘুষ নিয়ে প্রকল্প দেওয়া হতো। প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার আগেই অগ্রীম হাতিয়ে নেওয়া হতো ঘুষের টাকা। তখন নিজ নিজ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা ছিলো অফিসের হর্তাকর্তা। ঐ সময় প্রকল্প নিতে হলে সরকারি কর্মকর্তা ও নির্বাচিত চেয়ারম্যান/প্রশাসকদের পছন্দের ব্যক্তিদের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দিয়ে প্রকল্প নিতে হতো। এক লক্ষ টাকায় ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে প্রকল্প নেওয়ার পর বেশিরভাগ প্রকল্পের বাকি টাকা ভাগাভাগি করে নিত প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। কাগজে কলমে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহন করা হলেও বাস্তবে সেই সব টাকা কোন কাজে লাগেনি প্রান্তিক জনগোষ্ঠির। নড়াইলের জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বরে নড়াইল জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করার পর কার্যালয়টির চিত্র পুরোপুরি পালটে গেছে। বর্তমানে মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, করবস্থান, শশ্মান, মন্দির গির্জা, রাস্তাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন (সংস্কার বা নির্মান) করার জন্য প্রকল্প অনুমোদন নিতে হলে জেলা পরিষদের কর্মকর্তা, কর্মচারি অথবা কোন দালালদের দিতে হয়না কোন উৎকোচ। প্রতিষ্ঠানের আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই বাছাই করে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রকল্প। আর বেশিরভাগ প্রকল্প টেন্ডার দিয়ে ঠিকাদারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, করবস্থান, শশ্মান, মন্দির গির্জাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিজ নিজ কমিটির মাধ্যমে ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও সেখানে তীক্ষè নজরদারি রেখেছেন জেলা পরিষদের এই সর্বোচ্চ কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জাহান।  
 
 
জেলা পরিষদ সুত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ ইং অর্থ বছরে এডিপির ৬ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকার ২ শত ৩টি প্রকল্প, ২০২৪-২৫ ইং অর্থ বছরে ৬ কোটি ৭০ লক্ষ টাকার ৩ শত ৩টি প্রকল্প অনুমোদন করেছেন বর্তমান প্রশাসক। বিগত ২০২৩-২৪ ইং অর্থ বছরের রাজস্ব খাতের মোট ১১কোটি ৩৬ লক্ষ টাকার ৫ শত ৮২টির মধ্যে (আংশিক)  কিছু প্রকল্প অধিকতর যাচাই বাছাই আন্তে যুক্তিকতা, বাস্তবতা জন কল্যানমূখিতা বিবেচনায় প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে। জেলা পরিষদ প্রশাসকের কঠোর নির্দেশে বিভিন্ন  দপ্তরের কর্মকর্তাদের দিয়ে যাচাই বাছাই করে কাজের মান সন্তোষজনক হলে চুড়ান্ত বিল দেওয়া হচ্ছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের। যে সকল প্রকল্পে কাজের মান ভাল হচ্ছে না সেই সকল প্রকল্পের বিল স্থগিত রাখা হয়েছে।
 
 
জেলার লোহাগড়া উপজেলার জয়পুর ইউনিয়নের সম্মিলিত কবরস্থানের সভাপতি মো: মাহমুদুল হাসান কচি বলেন, মরিচপাশা গ্রামের কবরস্থানটিতে দীর্ঘদিন ধরে অর্থের অভাবে সংস্কার কাজ বন্ধ ছিল। জেলা পরিষদের প্রশাসক বরাবর একটি আবেদন করেছিলাম। কিছুদিন পর জেলা পরিষদ থেকে একটি ফোন পায়। আমাকে বলে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য এক লক্ষ টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র জমা দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করার কথা বলে। তিনি বলেন, আমি ফোন পেয়ে আবেগ আপ্লুত হয়েছি। আমি ভাবতেও পারিনি জেলা পরিষদ থেকে ঘুষ না দিয়ে বরাদ্দ পাওয়া যাবে। এর আগে ৫-৬ বছর ধরে ঘুরেছি বরাদ্দ পাওয়ার আশায়, তখন ঘুষ দিতে পারিনি বলে বরাদ্দ পায়নি। বর্তমান জেলা প্রশাসকের আন্তরিকতায় এটা সম্ভব হয়েছে।
 
 
লোহাগড়া উপজেলার মরিচপাশা পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদের সভাপতি মো: বাবলু মিয়া বলেন, বছরের পর বছর জেলা পরিষদে চেষ্টা করেও মসজিদের উন্নয়নের জন্য কোন বরাদ্দ নিতে পারিনি। বর্তমান জেলা প্রশাসক জেলা পরিষদের প্রশাসকের দ্বায়িত্ব নেওয়ার পর কোন প্রকার উৎকোচ ছাড়াই বরাদ্দ দিচ্ছেন। এটা নড়াইলবাসীর জন্য ভাগ্যের ব্যাপার। জেলা পরিষদ থেকে ঘুষ না দিয়ে বরাদ্দ পাবো সেটা স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার মসজিদের মত শত শত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে এবছর ঘুষ ছাড়া লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন জেলা পরিষদের প্রশাসক।
 
 
একই এলাকার বাসিন্দা মো: ইমন মোল্লা, আলিমুজ্জামান, নাসুর সরদারসহ বেশ কয়েকজন বলেন, গত একযুগেরও বেশি সময় ধরে ঈদগাহে যাওয়ার রাস্তার জন্য ভোগান্তিতে ছিলেন এলাকাবাসী। বিগত সরকারের আমলে জেলা পরিষদের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন অফিসে ঘোরাঘুরি করলেও রাস্তা নির্মানের জন্য কেউ পদক্ষেপ নেয়নি। বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসকের কাছে রাস্তার জন্য আবেদন করা হলে তিনি আমাদের ঈদগাহে যাওয়ার রাস্তাটির উন্নয়ন (সিসি ঢালাই) করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইতোমধ্যে রাস্তাটির কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এলাকার হাজারো মানুষ ঈদের নামাজ পড়ার জন্য ঈদগাহে যেতে পারবে। প্রতিনিয়ত এই রাস্তাটি দিয়ে এলাকার শত শত মানুষ চলাচল করে।
 
নড়াইল সদরের ডৌয়াতলা কবরস্থানের দায়িত্বে নিয়োজিত আবু সাঈদ মোল্লা বলেন, জেলা পরিষদে আবেদন করেছিলাম, কোন যোগাযোগ করিনি। হঠাৎ একদিন জেলা পরিষদ থেকে আমাকে  ফোন করে বলল যে আপনার কবরস্থানের জন্য দুই লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এভাবে আবেদন করলে যে কবরস্থানের জন্য বরাদ্দ পাওয়া যাবে সেটা আমি কল্পনাও করিনি। জেলা পরিষদের প্রশাসক মহোদয় একজন সৎ মানুষ বলেই সকলে এভাবে ঘুষ ছাড়াই বরাদ্দ পাচ্ছে। এর আগে ঘুষ ছাড়া জেলা পরিষদ থেকে কেউ বরাদ্দ পায়নি।
 
নড়াইল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট তারিকুজ্জামান লিটু বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক নড়াইল জেলা পরিষদের প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পরিষদের চিত্র পুরোপুরি পালটে গেছে। আগে নড়াইল জেলা পরিষদ থেকে কোন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ নিতে হলে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ দিতে হতো। বর্তমান জেলা পরিষদ থেকে সরকারি বরাদ্দ পেতে কর্মকর্তা কর্মচারীদের কোন ঘুষ দিতে হয়না। নড়াইল জেলা পরিষদ যেভাবে স্বচ্ছতার সাথে চলছে, দেশের প্রতিটা জেলা পরিষদ যদি এভাবে চলতো তাহলে দেশের টাকাগুলো জনগনের কাজে লাগতো। প্রতিটা জেলা পরিষদে নড়াইলের মত সৎ ও যোগ্য প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া উচিত।
 
নড়াইলের পাবলিক প্রসিউকিটর (পিপি) ও নড়াইল প্রেসক্লাবের আহবায়ক এস এম আব্দুল হক বলেন, জেলা পরিষদের প্রশাসক শুধু জেলা পরিষদ নয়, তিনি জেলার বিভিন্ন অফিসে দূর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের সাথে পরামর্শ করছেন কিভাবে জনগনকে ভোগান্তি ছাড়া সেবা দেওয়া যায়। বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিস, হাসপাতাল, জেলা পরিষদসহ বিভিন্ন অফিস ইতোমধ্যে দালাল মুক্ত করেছেন বর্তমান জেলা প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান। প্রতিটা জেলায় এমন একজন করে জেলা প্রশাসক থাকলে আগামীর বাংলাদেশ হবে দূর্নীতিমুক্ত। আর দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে হলে আগে প্রতিটা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে দূর্নীতিমুক্ত হতে হবে। প্রতিটা জেলায় নড়াইলের জেলা প্রশাসকের মত দূর্নীতি মুক্ত অফিসার নিয়োগ দিলে দেশ হবে দূর্নীতিমুক্ত। আর তখনই ছাত্র-জনতার আন্দোলন সফল হবে।
 
 
নড়াইলের জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদ প্রশাসক শারমিন আক্তার জাহান বলেন, সরকারি প্রতিটা টাকাই এদেশের জনগনের টাকা। সরকার থেকে বরাদ্দ পাওয়া শতভাগ অর্থ জনগনের কাজে লাগাতে চাই। বরাদ্দ প্রাপ্ত সকল অর্থ যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে অল্প দিনের মধ্যে আমাদের দেশের চেহারা পালটে যাবে। নড়াইল জেলা পরিষদসহ সকল দপ্তরে সরকারি যত বরাদ্দ পাওয়া যাবে, আমি সেই অর্থ শতভাগ নড়াইলের মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজে লাগাতে চাই। আমি মনে করি সরকারি পুরো অর্থ যদি আমরা জনগনের কাজে লাগাতে পারি তাহলে দ্রুতই আমাদের দেশের চেহারা পালটে যাবে। আমি নড়াইলের জনগনের জন্য কাজ করতে চাই। প্রকল্পগুলো বরাদ্দ দেওয়ার সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের অনেক চাপ থাকে। যদি রাজনৈতিক নেতাদের চাপ না থাকতো তাহলে নড়াইলের জনগনের জন্য আরও বেশি উন্নয়নমূলক কাজ করা যেত। 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
এক ক্লিকে বিভাগের খবর