পাঠক বার্তা ডেস্ক
ফিলিস্তিনিদের জন্য ১৫ মে মানে শুধু একটি দিন নয়, বরং ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ও দুঃসহ এক অধ্যায়ের প্রতীক—“নাকবা” বা “মহাবিপর্যয়” দিবস। ১৯৪৮ সালের এই দিনে নিজেদের ঘরবাড়ি, জমি, এমনকি স্বপ্ন হারান কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি। ৭৭ বছর পরও সেই ক্ষত আজও রক্তাক্ত। সেই দুঃসহ স্মৃতি বুকে নিয়েই প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে ফিলিস্তিনিরা পালন করে এই দিনটি।
এবারের নাকবা দিবসের আগের রাত থেকেই গাজা উপত্যকায় আবারও ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। বৃহস্পতিবারের এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১১৫ জন, যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী ও শিশু। স্থানীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিসে ভোররাতে চালানো বোমাবর্ষণে নিহত হন অন্তত ৬১ জন। একই দিন উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকার আল-তাওবাহ চিকিৎসাকেন্দ্রে ইসরায়েলি বিমান হামলায় প্রাণ যায় আরও অন্তত ১৫ জনের।
হামলার প্রেক্ষিতে গাজার অন্তত তিনটি হাসপাতালের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো হলো—জাবালিয়ার আল–আওদা হাসপাতাল, খান ইউনিসের ইন্দোনেশিয়ান হাসপাতাল এবং ইউরোপীয়ান হাসপাতাল।
দেইর এল বালাহ এলাকায় আবাসিক ভবন লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী সরাসরি বিমান হামলা চালিয়েছে। খান ইউনিসের অন্তত নয়টি বাড়ি ধ্বংস করা হয়।
এদিকে হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে ইসরায়েলের সঙ্গে পরোক্ষ যুদ্ধবিরতি আলোচনার মধ্যেই এই হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। হামাসের অভিযোগ, ইসরায়েলের এই আচরণ যুদ্ধবিরতির আলোচনা ব্যাহত করার অপচেষ্টা।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়ে প্রায় ১,১৩৯ জনকে হত্যা ও দুই শতাধিক ব্যক্তিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এর পর থেকেই গাজার ওপর নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৩ হাজার ১০ জন। তবে গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের দাবি, এই সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়িয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকা বহু মানুষকে মৃত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।
৭৭ বছর আগে শুরু হওয়া একটি জাতির বাস্তুচ্যুতির ইতিহাস আজও থেমে নেই। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা আরও নির্মম হয়ে উঠছে। “নাকবা” শুধু ইতিহাস নয়, ফিলিস্তিনিদের বর্তমানও।