নড়াইল অফিস:
ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য প্রকাশের প্রতিবাদে নড়াইলে সংবাদ সম্মেলন করেছে ‘জুলাই শহীদ পরিবার’ এবং ‘জুলাই যোদ্ধারা’। গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো-তে প্রকাশিত “জমির বিরোধে খুন, দুর্ঘটনায় মৃত্যু, তবু তাঁরা জুলাই শহীদ” শিরোনামের প্রতিবেদনের প্রতিবাদে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে নড়াইল প্রেসক্লাব হলরুমে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের আয়োজনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আহত জুলাই যোদ্ধা ও জুলাই বিপ্লবী যুব সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শেখ মোস্তাফিজ। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জুলাই শহীদ রবিউল ইসলাম লিমনের স্ত্রী সাবরিনা আক্তার।
সাবরিনা আক্তার (রবিউল ইসলাম লিমনের স্ত্রী) বলেন, “আমার স্বামী মিথ্যা অপবাদ নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। এখন তার মৃত্যুর পরও এই অপবাদ পরিবারের ওপর মানসিক যন্ত্রণা হয়ে ফিরে আসছে। আমরা এর ন্যায়বিচার চাই।
তিনি আরো বলেন ” প্রথম আলো-তে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে, প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুনরায় সঠিক প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে, ভুল তথ্যের জন্য ভুক্তভোগী পরিবার ও শহীদদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে দুঃখপ্রকাশ করতে হবে
লিখিত বক্তব্যে শেখ মোস্তাফিজ বলেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো-তে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। প্রতিবেদনে জুলাই শহীদ মো. রবিউল ইসলামকে ‘ভুয়া জুলাই শহীদ’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা চরম অপমানজনক ও সত্যের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় গণঅভ্যুত্থানের সময় রবিউল ইসলাম এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ছিলেন এবং এক শিশুকে আহত করেন। পরে উত্তেজিত জনতা তাকে মারধর করে এবং তার মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এটি পুরোপুরি মিথ্যা। মো. রবিউল ইসলাম লিমনের (ফেসবুক আইডি: https://www.facebook.com/share/1FRi8MR2ft/?mibextid=wwXlfr, Rabiul Limon) পুরো জুলাই আন্দোলনে ছাত্রজনতার পক্ষে কাজ করেছেন। তাঁর ফেসবুক আইডিতে রয়েছে অসংখ্য পোস্ট ও ভিডিও, যেখানে তিনি আন্দোলনের সমর্থনে সরব ছিলেন। এমনকি শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করার পর, তিনি সামাজিক মাধ্যমে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে পোস্ট করেছিলেন।
ঘটনার দিন উত্তরা হাউজ বিল্ডিং এলাকায় বিজয় মিছিল চলাকালে হঠাৎ করেই গোলাগুলির পরিস্থিতি তৈরি হয়। তখন উত্তেজিত জনতা রবিউলকে ‘র’ এর এজেন্ট বা ছাত্রলীগ কর্মী বলে ভুল সন্দেহ করে বেধড়ক মারধর করে। গুজব ছড়িয়ে পড়ে, তিনি গুলি চালিয়েছেন। কেউ আর তাঁকে রক্ষা করতে সাহস পায়নি। এই মর্মান্তিক ভুল বোঝাবুঝির কারণে মব লিঞ্চিংয়ের শিকার হন রবিউল।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, রবিউল ইসলাম লিমন ছিলেন ‘প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন’-এর একজন স্বেচ্ছাসেবক শিক্ষক। তিনি বিনামূল্যে পথশিশুদের শিক্ষাদান করতেন। তাঁর সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির সহকর্মীরা এবং শিক্ষার্থীদের পরিবারও তাঁর মানবিক কাজের সাক্ষী। তাঁর মতো একজন সমাজসেবক কীভাবে নিজেরই পক্ষে থাকা জনতার উপর গুলি চালাতে পারেন—তা একবার ভেবেই দেখা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জুলাই শহীদ রবিউল ইসলাম লিমনের স্ত্রী সাবরিনা আক্তার, জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব মাহমুদা সুলতানা রিমি, জুলাই শহীদ রবিউলের চাচা মোল্যা আহমেদ সাঈদ (টুলু)।