চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি॥ওয়াজ-মাহফিলের খরচ যোগাতে মানুষের বাড়ি-ঘরে গিয়ে নগদ টাকা ও ধান-চাল সংগ্রহ করছেন মাদরাসা পড়ুয়া প্রায় দশ হাজার শিশু শিক্ষার্থী। এসকল শিশু ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ক্বাওমী, নূরানী ও হাফেজীয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী। খাবার না খেয়ে মাইলের পর মাইল পায়ে হেটেই একদল মাদরাসা শিক্ষকের লক্ষ্য পূরণ করেন এসব শিক্ষার্থী। এমন লক্ষ্য পূরণে অপারগতা প্রকাশ করলে বেত্রাঘাত নিতে হয় শিক্ষার্থীদের। বাধ্য হয়েই ভিক্ষা করেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ অনুসন্ধানে এমন তথ্যের প্রমাণ মিলেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাধারণ মানুষের মাঝে ইসলামের দাওয়াত পৌছানোর অংশ হিসেবে ওয়াজ-মাহফিলের আয়োজন করে থাকে ব্যক্তি কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। মূলতঃ শীত মৌসুমে শহর ও গ্রাম পর্যায়ে ওয়াজ-মাহফিল হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অর্থলোভি এক শ্রেণীর মাদরাসা শিক্ষক ওয়াজ-মাহফিলের নামে শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে ভিক্ষা করান। সংগৃহীত অর্থের সত্তর শতাংশ লোপাট করেন তারা। এমনকি পুরো অর্থও গায়ের করেন কিছু শিক্ষক।
অর্থলোভি এক শিক্ষকের অমানুষিক আচরণের লোমহর্ষক বর্ননা দিয়েছেন ওয়াজ-মাহফিলের খরচ যোগাতে আসা ১১ বছর বয়সী সুমন (ছদ্মনাম)। সে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার শশিভূষণ থানাধীন শামসুল হক হাফেজীয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী বলেন, '৮ থেকে ১০ মাইল পায়ে হেঁটে মানুষের বাড়ি-ঘরে গিয়ে নগদ টাকা ও চাল তুলতে কষ্ট হয়। আমি না যেতে চাইলে ইসমাইল হুজুর আমার মুখে ও পিঠে বেত দিয়ে পিটিয়েছে। বেতের আঘাতের ব্যথা নিয়ে বের হয়েছি।
সম্প্রতি সুমন চরফ্যাশন পৌর শহরে নগদ টাকা ও চাল তুলতে করতে আসলে স্থানীয় বাসিন্দারা এ ঘটনাটি জানতে পারেন। ওই সময় তার শরীরে আঘাতের চিহ্নগুলো স্পষ্ট দেখা গেছে। তার সাথে একই মাদরাসার আরো দুই শিশু শিক্ষার্থী ছিলেন।
এ বিষয়ে সুমনের বাবা বলেন, আমি আমার ছেলের পড়াশোনার খরচ বহন করি, কিন্তু তিনি আমার ছেলেকে মারধর করে গ্রামে চাঁদা তুলতে পাঠাবে কেন? আমি গরিব হতে পারি, আমার ইজ্জত সম্মান আছে। স্থানীয় লোকজন সাথে নিয়ে ইসমাইল হুজুরকে আমি জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছেন নিয়ম করে সকল ছাত্রদের এলাকা ভিত্তিক ভাগ করে পাঠান। পরে তিনি এ বিষয়ে ক্ষমা চান।
এ ঘটনার সূত্র ধরে ওই মাদরাসা গিয়ে শিক্ষক ইসমাইল কে খোঁজ করলে তাকে পাওয়া যায়নি।
আঞ্চলিক ক্বাওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড ভোলা সূত্রে জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলায় ক্বাওমী ৭০টি, নূরানী ৩০০টি ও ২০০টি হাফেজীয়া মাদরাসা রয়েছে, তবে এ ধরনের মাদরাসাগুলোর সংখ্যা কিছুটা কম-বেশি হতে পারে। এসব মাদরাসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার।
একাধিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক জানান, শিশুদের দিয়ে ভিক্ষা করানো অন্যায়। নাম মাত্র এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মূলতঃ ভিক্ষা করার ধরন শেখানো হয়।
ওয়াজ-মাহফিলের খরচ যোগাতে শিশু শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে হবে কেন? তারা বয়সে ছোট হলেও তাদের আত্মসম্মানবোধ রয়েছে। অর্থলোভী শিক্ষকদের আইনের আওতায় আনা উচিত।
আঞ্চলিক ক্বাওমী মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আবু তাহের বলেন, ক্বাওমী মাদরাসাগুলো সাধারণ মানুষের অর্থিক সহায়তায় চলে, তবে নূরানী ও হাফেজীয়া মাদরাসাগুলো চলে শিক্ষার্থীদের বেতনের উপর নির্ভর করে।
ওয়াজ-মাহফিলের খরচ যোগানোর জন্য শিক্ষার্থীদের মারধর করে টাকা তোলার বিষয়টি ইসলাম ধর্ম সমর্থন করে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ছাত্রদের আঘাত করারই নিয়ম নাই, চাঁদা তোলার জন্য মারধরতো দূরের কথা। নাউজুবিল্লাহ, এটা জঘন্যতম কাজ। টাকা তোলার বিষয়টি যুগ-যুগ ধরে চলে আসছে। অনেক মাদরাসা কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের দিয়ে টাকা না তুলে স্থানীয় মুসল্লীদের তালিকা করে খরচ বাবত চাঁদা নির্ধারণ করেন। ছোটখাটো কিছু মাদরাসা বাজার থেকে শুরু করে বাড়িঘরে গিয়েও চাঁদা সংগ্রহ করে।
এসটি/এমএইচ
প্রধান কার্যলয়ঃ কনফিডেন্স সেন্টার, ভবন-২,
ফ্ল্যাট নং-৭/ই জিপি-খ-৯, প্রগতি স্বরণী, শাহজাদপুর, গুলশান, ঢাকা-১২১২।
ফোন নম্বরঃ +8809638031309 ই-মেইল:mohammadpurprotidin@gmail.com
@মহম্মদপুর প্রতিদিন