সাতক্ষীরা প্রতিনিধিঃ পাঠকবার্তা
সাতক্ষীরার খোলপেটুয়া নদীর ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধে এখনো বিকল্প রিংবাঁধ নির্মাণ করা যায়নি। ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় আশাশুনি উপজেলার আটটি গ্রামের কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সোমবার (৩১ মার্চ) সকালে আশাশুনি উপজেলার বিছট এলাকার খোলপেটুয়া নদীর উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধের একটি অংশ ভেঙে যায়। সেখান দিয়ে লোকালয়ে ঢুকতে শুরু করে লোনাপানি। জোয়ারের তোড়ে একে একে প্লাবিত হয় বিছট, বল্লভপুর, আনুলিয়া, নয়াখালী, চেঁচুয়া, কাকবসিয়া, পারবিছুট, বাসুদেবপুরসহ আটটি গ্রাম। ভেসে যায় কয়েক হাজার বিঘা মাছের ঘের। নষ্ট হয় শত শত বিঘা জমির বোরো ধান। ভেঙে পড়ে শত শত কাঁচাঘর।
মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) বিছট গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের পাশে গিয়ে দেখা যায়, বাঁধভাঙা পানির চাপে ভেঙে পড়েছে কয়েকটি কাঁচাঘর। ভেসে গেছে এসব ঘরের মালামাল। সেখানকার বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছেন বেড়িবাঁধের উওপর। রান্নার সুযোগ না থাকায় অনেকে রয়েছেন অর্ধাহারে। তাদেরই একজন সামাদ গাজী। তিনি জানান, ঘরে পানি ওঠায় রান্নার সুযোগ নেই। সোমবার রাত থেকে না খেয়ে রয়েছেন। দুপুরের জন্য কিছু শুকনা খাবার সংগ্রহ করে রেখেছেন। রাতে কী খাবেন জানেন না। খাবার পানিও শেষ।
তার মতই আরেক বাসিন্দা জাহানারা বেগমের বাড়িঘরও তলিয়ে আছে জোয়ারের পানিতে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘পানির তীব্র স্রোতে ঘরের সব মালামাল, হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু ভেসে গেছে। জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ফেলে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছি।’
আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রুহুল বলেন, ‘ভাঙনের পরপরই গ্রামবাসীরা কয়েকবার স্বেচ্ছাশ্রমে বিকল্প রিংবাঁধ তৈরির চেষ্টা করলেও প্রবল জোয়ারের তোড়ে সেই বাঁধও ধসে পড়ে। ফলে ভাঙন আরও গভীর হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে ঈদের কারণে শ্রমিক সংকট ও বালু আনতে দেরি হওয়ায় এখনো পুরোপুরি কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।’
এদিকে মঙ্গলবার সকালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা।
জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহম্মেদ সাংবাদিকদের বলেন, আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট গ্রামে খোলপেটুয়া নদীর পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ছিল। গতকাল সেটার ১০০ মিটার অংশ ভেঙে গেছে। এতে ৮-১০টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। আমি খবর পাওয়ার পরপরই পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জরুরি নির্দেশনা দিয়েছি। তবে ঈদের কারণে শ্রমিক সংকট ও বালু আনতে দেরি হওয়ায় কাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি সকালেই ঘটনাস্থলে এসে দেখেছি, পরিস্থিতি ভয়াবহ। আমরা যদি দ্রুত ব্যবস্থা নিতে না পারি, তাহলে পরবর্তী জোয়ারে আরও প্রায় আধা কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে যেতে পারে। এরইমধ্যে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুটি বিভাগকে একত্রে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা আমাদের সহযোগিতা করছেন। আমরা যতদ্রুত সম্ভব বাঁধ মেরামতের চেষ্টা করছি।’