নড়াইল প্রতিনিধিঃ
সরকারি ম্যাপে থাকা জায়গা উদ্ধার করে নড়াইলে সরকারি রাস্তা প্রশস্তকরন. ড্রেন নির্মান এবং বিদ্যুৎতের খুটি বসানোর জায়গা নিধারনের সময় নড়াইলে ফেসবুক লাইভে এসে সাম্প্রদায়িক হামলার মিথ্যা অভিযোগ করায় নড়াইলের হাটবাড়িয়া ডিসি পার্ক এলাকায় হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
আজ শুক্রবার সকালে নড়াইল পৌরসভার হাটবাড়িয়া ডিসি পার্ক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শহরের মাছিমদিয়া এলাকার সুলতান সেতুর ওভার ব্রীজের নীচ থেকে হাটবাড়িয়া ডিসি পার্ক পর্যন্ত ভাঙ্গাচোরা ব্যবহারে অযোগ্য রাস্তাটি প্রায় ৫ শ মিটার বর্তমানে প্রশস্তকরণের কাজ চলছে। নির্মাণাধীন সড়কের একটি অংশের দু’পাশে ওই শিক্ষকদের ভোগদখল করা জায়গা রয়েছে। তবে সরকারি ম্যাপ অনুযায়ী রাস্তার জন্য ২৬ ফুট চওড়া জায়গার উল্লেখ্য থাকলে বর্তমানে তা অনেক ছোট। গত বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ১ টার দিকে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত শাখা) মোহাম্মদ মেহেদী হাসানসহ প্রশাসনের কয়েকজন নির্মাণাধীন সড়কের কাজের ওখানে গিয়ে শিক্ষককে সড়কের পাশ দিয়ে ড্রেনেজ নির্মাণ এবং বিদ্যুতের পিলার স্থাপনের জন্য কয়েক ফুট জায়গা ছাড়ার অনুরোধ করেন।
ভূক্তভোগী হাটবাড়িয়া এলাকায় বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস অভিযোগ করেন, রাস্তা প্রশস্তকরণ কাজে আমাদের কিছু জায়গা ওই সড়কের মধ্যে চলে গিয়েছে। জনকল্যাণে সেটা মেনে নিয়েছি। কিন্তু শুক্রবার সকালে স্থানীয় বিএনপি নেতা দেলোয়ারের নেতৃত্বে স্থানীয়রা কিছু লোকজন আমাদের জমির বেড়া ভাঙচুর করে। এ ঘটনা ভিডিও করায় আমার ছেলেকে তাঁরা মারধর করে৷ পরে এনডিসি মহোদয় বিষয়টির মিমাংসার জন্য আমাদের পরিবারের সবাইকে ডিসি পার্কে ডেকেছিলেন। আমরা পার্কে ঢুকতেই দেলোয়ারের নেতৃত্বে বাদল ঘোষ, উজ্জ্বল ঘোষ, কাজল ঘোষ, শ্যামল ভদ্র, অরূপ ভদ্র,অনিক ভদ্রসহ বেশ কয়েক জন নেশাখোর ব্যক্তি আমাদের ওপর হামলে পড়ে মারধর করে। স্থানীয় কিছু মানুষ আমাদের উন্নতি ভালো চোখে দেখে না। অনেক জমিজমা হিংসার চোখে দেখে। আমরা নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি।
ভুক্তভোগিদের অভিযোগ, অতিরিক্ত জায়গা ছাড়তে রাজি না হওয়ায় শুক্রবার দুদফা তাদের সবাইকে মারধর করা হয়েছে।
ভূক্ত ভোগীর ছেলে স্বাগত বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার সকালে দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্ব একদল লোক আমাদের বাড়ির অপর পাশের জমিতে দেওয়া বেড়া ভাঙতে থাকে। এ সময় আমি সে দৃশ্য ভিডিও করতে গেলে তারা আমাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করে এমনকি ডিসি পার্কের সামনে থেকে আমিসহ বাবা-মা ও বোনকে মারধর করে।
নড়াইল পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বলেন, হাটবাড়িয়া ডিসি পার্কের রাস্তা ম্যাপে ২৬ ফুট জায়গা থাকলেও স্থানীয় গোপাল বিশ্বাস সরকারি জায়গা দখল করে রেখেছে। এ বিষয়টি ফয়সালা করার জন্য শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে এনডিসি মহোদয় আমাদের স্থানীয় মানুষদের ডিসি পার্কে ডাকেন। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমরা ওই শিক্ষকের বাড়ির সামনে দিয়ে ডিসি পার্কে যাচ্ছিলাম। এ সময় ওই শিক্ষকের ছেলে ফেসবুকে লাইভ করে অহেতুক তাঁদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে-এমন কথা বলতে থাকে। আমরা এতে বাঁধা দিয়ে তার মোবাইল কেড়ে নিয়ে পরে ফেরত দেওয়া হয়। তাঁদের ওপর আক্রমণ বা কাওকে মারধর করা হয়নি। তাঁদের করা অভিযোগ মিথ্যা।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট (নেজারত শাখা) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান বলেন, জনস্বার্থে পার্কে ঢোকার রাস্তা প্রশস্তশরণের কাজ চলছে। রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটি অপসারণের জন্য আমরা ওই শিক্ষককে একটু জমি ছাড়তে বলেছিলাম, কিন্তু তিনি রাজি হননি। আজ শুক্রবার আমরা রাস্তাটি জায়গাটি মাপজোক করতে গিয়েছিলাম। এসময় এলাকাবাসীও সেখানে আসে। তাঁরা জানায়, ‘রাস্তার পাশে আরো সরকারি জায়গা আছে।’ পরে আমরা মাপার কাজ শুরু করলে ওই শিক্ষকের ছেলে এসে লাইভ অথবা ভিডিও করেত শুরু করেন। এতে গ্রামবাসী বাঁধা দেন। একপর্যায়ে রাস্তার ওপর দুপক্ষ উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটনা ঘটে। যেহেতু আমারা রাস্তার মাপের জন্য গিয়েছিলাম, আমাদের সঙ্গে কোনো ফোর্স ছিল না। আমি বারবার দু’পক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, ওই শিক্ষক পরিবার নিষেধ করায় ওই জমিতে একটা খুঁটিও পোতা হয়নি। অথচ ছেলেটি লাইভে গিয়ে তাঁদের ওপর সাম্প্রদকয়িক হামলা, তাঁদের ঘরবাড়ি দখলের মিথ্যা অভিযোগ তোলে। তাঁর এই কাজের জন্যই এলাকাবাসী উত্তেজিত হয়। পরে আমি ছেলেটিকে ডেকেছিলাম মিমাংসার জন্য। কিন্তু উনি লাইভ চালিয়ে যেতে থাকেন৷ এর ওইসব কথা বলতে থাতেন। এতে এলাকার লোকজনের সঙ্গে বাকবিতন্ডা চলতেই থাকে। পরে পুলিশে খবর দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। আর বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় রাস্তার জায়গা মাপার কাজও অসমাপ্ত করে চলে আসতে হয়।
এ ব্যাপারে সদর থানা-পুলিশের (ওসি) মো. সাজেদুল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক রয়েছে।